দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র প্রভাব বরিশাল সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে ২/ ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে কয়েকটি এলাকার কিছু কাঁচা ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষতি বরিশাল অঞ্চলে হয়নি বলে সরকারীভাবে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিযুক্ত পিআইও সূত্রে জানা গেছে। ঝড়ের আশংকায় গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বারিশাল-ঢাকা সহ বরিশালের অভ্যন্তরীন সকল ধরনের যাত্রীবাহি নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল অঞ্চলে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আঘাত হানে। এসময় ‘ফনি’র বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে বরিশাল ঘূর্ণীঝড় প্রস্তিুতি কেন্দ্র’র কর্মকর্তারা।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জেলার ১০ উপজেলা এলাকায় ৩শত ৩১টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে সাধারণ মানুষ যেতে অনিহা প্রকাশ করছে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও পরে আবার ফিরে আসতে শুরু করে। অনেকেই বলছে গবাদী পশু ও নিজেদের পৈত্রিক ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা।
এদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উপকূলীয় জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। ৩৩১ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে তাতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।
স্বেচ্ছা সেবক টিমের সংখ্যা ১৫৫ টি, মেডিকেল টিমের সংখ্যা ৪০৮ টি এবং তার সদস্য সংখ্যা ২১০০ জন, এনজিও প্রস্তুত আছে ৩৩ টি যাদের সদস্য সংখ্যা ৮০০ জন, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে ৯টি যাতে জনবল রয়েছে ১৩০ জন, শুকনো খাবারের প্যাকেট রয়েছে ২৫ হাজার, নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ সহ অন্যান্য সদস্যরা ২১৬০ জন, এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে ২৫ টি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী কাজ করছে ৮৫০ জন, ২০ জন জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ১০ টি উপজেলায় কাজ করছে ৮৭ টি ইউনিয়নে ৮৭ জন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া আছে।
ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েসহ প্রতিটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রাপ্তির জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে পরবর্তীতে কী করণীয়তা তা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, কর্নেল (অঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি ও জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান।
সরকারী কর্মতর্কাদের পাশাপশি বরিশাল সিটি কপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিসিসি’র ৩০ টি ওয়ার্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে থাকার কথা বলছে।
নগরের বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনিবার অঘোষিত বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছিলো না শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
অপরদিকে শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র বিষয়ে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জেলা প্রশাসক কতৃক নিয়োজিত পিআইও জানান, রাত থেকেই দমকা হাওয়া বাতাস বইছে। তবে বৃষ্টি হয়নি। এই এলাকার ইউনিয়ন গুলোতে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
হিজলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দুই থেকে তিন নদীর পানি বৃদ্ধি হয়েছে, এতে রবি ফসলের নষ্ট হওয়ার আশংকাপ্রকাশ করা হচ্ছে। তবে জানমাল ও গবাদিপশুসহ কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।আগৈলঝাড়ায় বাতাশের সাথে সামাণ্য পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে , সেই সাথে রয়েছে দমকা হাওয়া, তবে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয় ক্ষতি নেই।
উজিরপুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র বাতাশের প্রভাব রয়েছে, বইছে দমকা হাওয়া। এখানে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উপজেলার ওটরা ইউনিয়নে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে।
বানারীপাড়ায় বাতাশের সাথে সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়নি। তবে বানারীপাড়া উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিলেও আবার অনেকেই ইতমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে। তাদেরকেআটকে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় বাতাস ও হালকা বৃষ্টি অভ্যহত রয়েছে। তবে নদীর পানি জোয়ারের পানি স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উপজেলায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখানে বৃষ্টি না থাকলেও দমকা হাওয়া বইছে সকাল থেকেই। এই উপজেলায়ও তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বিভিন্ন উপজেলার এসব তথ্য নিশ্চিতকরেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিযুক্ত বিভিন্ন উপজেলার নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের পিআইও।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply